শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের বর্ণাঢ্য বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান গত ২৯ চৈত্র ১৪২৪ বঙ্গাব্দ, ১৩ এপ্রিল-২০১৮ ইং শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশন ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিশেষকরে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি রাজধানী উত্তরার বিসিক অডিটরিয়ামে ২ দিন ব্যাপী এক বর্ণাঢ্য বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় উত্তরা ৬নং সেক্টরের বিসিক অডিটরিয়ামে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এমপি, শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইমামুল কবীর শান্ত ও ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ আহসানুল কবীর সান্ধ্যপ্রদীপ জ্বালিয়ে ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান। এসময় শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য প্রফেসর ড. কাজী মোঃ মফিজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামসুন্নাহার ও রেজিষ্ট্রার স্থপতি হোসনে আরা রহমান সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে‘ মন্ত্রী পুরাতন বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন, উন্নয়নশীল দেশ উন্নয়নে উদ্ভাসিত হবে আগামীর বাংলাদেশ’ স্লোগানের দিকে ইঙ্গিত ও উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের মানসকণ্যা মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বৈশাখী উৎসবকে বাঙ্গালী সংস্কৃতীর সার্বজনিন উৎসব উল্লেখ করে এক্ষেত্রেও উৎসব ভাতা নিয়মিত করার নির্দেশনা দেন। মন্ত্রী বলেন, এই উৎসব যে বাঙ্গালী সংস্কৃতী ও ঐত্যির প্রাণের উৎসব হিসেবে পরিগণীত হচ্ছে, তা ক্রমান্বয়ে এর উদযাপনের ব্যাপ্তি ও মানুষের প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা থেকেই উপলব্ধী করা যায়।
একই সাথে তিনি শান্ত-মারিয়ামের চৈত্রসংক্রান্তী ও বর্ষবরণ উৎসবকে বাংলা সংস্কৃতীর এক বৃহত্তম ও অনন্য উদ্যোগ বলে এর ভূয়োশী প্রশংসা করেন। শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইমামুল কবীর শান্ত পুরাতন বছরের যা কিছু ভাল-মোঙ্গলময়’ সেগুলোকে ধারণ করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে চলমান উন্নয়নের ধারায় সমবেতভাবে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সকলকে বাংলা নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানান। বিকেল ৩টায় শান্ত-মারিয়াম একাডেমী অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় চৈত্রসংক্রান্তি অনুষ্ঠান। এরপর শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সংগীত ও নৃত্য বিভাগের শিক্ষার্থিদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠী বান্দরবনের সাংস্কৃতিক দলের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন ও রাজশাহী নৃ গোষ্ঠি তাদের গম্ভীরা পরিবেশন করে।
অতঃপর অতিথি শিল্পীদের সঙ্গীত এবং বাউল সংগীত পরিবেশিত হয়। এভাবে নানা আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে চলে ¯œৃতী বিজরীত বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান। এই পর্বে শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রাস্টিবোর্ডের সম্মানীত সদস্যবৃন্দ, অতিথি শিল্পী মেহেরুণ আহমেদ ও বাউল শিল্পী আব্দুর রহমান-সহ শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশন ও শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ এবং ও ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক-সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ২দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ২য়দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইমামুল কবীর শান্ত পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ আহসানুল কবীর, শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী মোঃ মফিজুর রহমান, রেজিস্ট্রার স্থপতি হোসনে আরা রহমান সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের রিসার্চ সাপোর্ট এন্ড পাবলিকেশন্স ডিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক ওমর ফারুক, সাবেক সেনা প্রধান লেঃ জেনারেল হারুণ অর-রশীদ বীরপ্রতিক (সস্ত্রীক), ভারতীয় হাইকমিশনের শিক্ষাবিষয়ক প্রথম সচিব জিষœু প্রসন্ন মুখার্জি, অভিনেতা আহমেদ শরীফ, সঙ্গীত শিল্পি মেহেরুণ, চিত্রশিল্পী অধ্যাপক আব্দুর শাকুর শাহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিশু চিত্র বিশেষজ্ঞ ও শান্ত-মারিয়াম একাডেমীর উপদেষ্টা অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক মন্ডলীগণ। ঐদিনের বিসিক প্রাঙ্গনের ভেতর বাহিরে কি তরুণ কি প্রবীন’ সবাই মেতেছে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার বর্ণিল উচ্ছাসে।
শিশু-কিশোর, তরুণ-প্রবীন সবাই সেদিন লাল, সাদা, হোলুদ, নীল আর বাসন্তী সাজে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। পুরো প্রাঙ্গণে তখন বর্ষবরণের নৃত্য ও সঙ্গীতের গুণগুনানী। মুরি, মুরকি, বিন্নীধানের খই সহ মৌসুমী রকমারী খাই-দাই এর সাথে বাচ্চাদের উচ্ছলতা ছিল চোখে পড়ার মত। যেন রঙ্গীন প্রজাপতিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাঙ্গনের চতুর্দিকে বসেছিল বিভিন্ন দোকানের পসরা আর মাঝখানে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনার বর্নিল স্টেজ। যেখানে দূরদুরান্ত থেকে আগত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পী ও অন্যান্য শিল্পীদের গান ও নৃত্য প্রাঙ্গনটিকে উৎসবের আমেজে মূখর করে তুলেছিল।
অডিটরিয়ামের অভ্যন্তরে ছিল মূল স্টেজ। যেখানে ছিল শান্ত-মারিয়াম একাডেমী ও শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির কালচারাল ফোরাম, সংগীত ও নৃত্য বিভাগ ও বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থিগণদের পৃথক ও সমবেত বিভিন্ন নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশনা এবং ক্ষুদ্র ও নৃ গোষ্ঠী বান্দরবনের সাংস্কৃতিক দলের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন, রাজশাহীর গম্ভীরা ও গারো কালচারাল একাডেমি (ময়মনসিংহ) এর সমবেত ও একক সঙ্গীত, নৃত্য ও বাউল সঙ্গীত সহ মনোলোভা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর এভাবেই গান, নৃত্য সহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানকিতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে সাদরে বরণ করে নেয়ার বর্ণীল অনুষ্ঠান। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার স্থপতি হোসনে আরা রহমানের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়|